বর্তমানে দশ জনের ভেতর নয় জন মানুষের হাতে রয়েছে হালফ্যাশনের স্মার্টফোন আর সেই সাথে রয়েছে জীবনযাত্রার অন্যতম উপকরণ ইন্টারনেট। এর ফলে সহজ হয়ে গিয়েছে আমাদের মিডিয়া কংসাম্পশন ও এর বহুমাত্রিক ব্যবহার। এখন বিনোদন জগতের যেকোন আয়োজন আমরা সহজেই দেখে নিতে পারি যেকোনো সময় যেকোনো দিন, যা পূর্বের ক্যাবল টেলিভিশনের নির্দিষ্ট দিন তারিখে ধরে পছন্দের প্রোগ্রাম দেখার হাত থেকে দিয়েছে মুক্তি। আধুনিকায়নের ফলে দৈনন্দিন জীবনে আমাদের মিডিয়া কংসাম্পশন বেড়েই চলেছে যার বড় একটা অংশ জড়েু আছে কমার্শিয়াল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে কমার্শিয়াল সেক্টরও হয়ে উঠেছে আধুনিক এবং মানান সই।
তবে এই আধুনিকায়নের প্রভাবে কীভাবে বদলে যাচ্ছে আমাদের মিডিয়া কংসাম্পশনের অভ্যাস? চলনু সেটা নিয়েই আলোচনা করি।
ভিউয়ারশিপের উপর ভিত্তি করে আমরা মিডিয়া সেক্টরকেকে দু’ভাগে ভাগ করতে পারি-
ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া:
সাধারনভাবে একমখিু কমিউনিকেশনের সকল মাধ্যমকে এই মিডিয়ার অভ্যন্তরে ফেলা যায়। পত্রপত্রিকা, রেডিও, ক্যাবল কানেকশন যুক্ত টেলিভিশন ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মকে আমরা ট্রেডিশনাল মিডিয়া বলতে পারি। নব্বইয়ের দশক এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক ছিল বাংলাদেশে টেলিভিশন বিনোদনের স্বর্ণযুগ। এই সময়ে আমরা দেখেছি বেশ কিছু কালজয়ী নাটক এবং সিনেমা। শুক্রবারে বিটিভিতে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি কিংবা ঈদের বিশেষ আয়োজন, কোন আয়োজনেই দর্শকের কমতি পরতো না।
শহরের ছোট পরিবার কিংবা গ্রামের চায়ের দোকানে বুড়োদের আড্ডা, সকলের চোখ থাকতো এক টেলিভিশনের দিকে। আর এই সকল দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষন করতেই তখনকার কমার্শিয়াল গুলো ছিল বিনোদন কেন্দ্রিক। কোরবানির ঈদে আরসি কোলার বিখ্যাত কমার্শিয়াল “ভাইজান খবর একখান, খবর একখান, দেরী হইয়া যায়” কিংবা দেশের বিখ্যাত মডেল নোবেলের ফিচার করা আরসি কোলার কমার্শিয়াল গান “তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী তুমি গলার মালা” অথবা রিয়াজের বিখ্যাত লাইন “তুমি, আমি আর ডেনিশ” এখনও মনে জায়গা করে আছে লাখো দর্শকের। তবে এসকল কমার্শিয়ালে একটা ব্যাপার খুবই কমন ছিল। সেটি হলো তখনকার জনপ্রিয় চলচিত্র এবং নাটকের নায়ক-নায়িকাদের এসকল কমার্শিয়ালে উপস্থিতি। কারণ সাধারণ দর্শকের কাছে তারাই ছিল প্রিয় মখু আর প্রিয় মুখরাই দর্শকদের যেকোন মেসেজ সহজে বিশ্বাস করাতে পারে।
তবে সময়ের সাথে সাথে টেলিভিশনের ভিউয়ারশিপ দিন দিন কমছে। সেই সাথে কমে আসছে কমার্শিয়ালের প্রতি নির্মাতাদের বিশেষ নজর। Nielsen রিপোর্ট মোতাবেক ১৯৯৫ তে টিভি ভিউয়ারশিপ ছিল ৩১% যা ২০০২ এ ৬১% হয় এবং ২০১১ তে ৭৪% গিয়ে ঠেকে। শুরুতে শুধু বাংলাদেশ টেলিভিশন (BTV) থাকলেও ১৯৯৭ এর দিকে ATN Bangla ও ২০০০ এ Ekhushe TV চালুহয়। বর্তমানে ৪ টি সরকারি সহ ৩৭ টির ও বেশি টিভি বেসরকারি টিভি চ্যানেল চালু আছে।
২০১৬ সাল পর্যন্ত টিভি চ্যানেল গুলোর ভিউয়ারশিপ ৮২.৯% এ বাড়লেও ২০১৭ সালে কমে এসে দাঁড়ায় ৮০% যা এখন দিনে দিনে আরও কমছে। মূলত অপর্যাপ্ত, মানসম্মত, সময়োপযোগী দেশিও কন্টেন্টের অভাব, মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতি, বিজ্ঞাপন বিরতির ফি বেশি হওয়া, এক মখিু কমিউনিকেশন, সময়সাপেক্ষ এবং নির্দিষ্ট অডিয়েন্স না থাকার কারনে দিনদিন নিম্নগামী হচ্ছে এই হার।
মার্কেটিংয়ে কনস্ট্রাকশন্ এপ্রোচ না থাকাকে দায়ী করেছেন অভিনেতা ও নাট্য নির্মাতা ইরেশ যাকের। নির্মাতা থেকে শুরু করে কলাকুশলি, বিজ্ঞাপন দাতা সংস্থা এবং অডিয়েন্স ও ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন বা ডিজিটাল মিডিয়ার দিকে। তবে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের চিত্র বলে ভিন্ন কথা। অবসর সময়ে গৃহিণীদের অথবা চা দোকানে কিংবা সেলনেু এখনো টিভিই বিনোদনের উৎস। গ্রামে ভিউইয়ারশিপ এর হার এখনো ৮০% থেকে ৯০% এর ঘরে, যদিও বিদেশে চ্যানেল গুলোর আধিপত্য এইখানে বেশি।
ডিজিটাল মিডিয়া:
এই মিডিয়া বলতে মূলত ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে এক্সেস করা যায় এমন সব প্ল্যাটফর্ম কে বোঝায়। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি (ওভার দ্যা টপ) প্লাটফর্ম মলতূ এই মিডিয়ার অংশ। স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক হওয়ায় এই প্লাটফর্মগুলোতে সহজেই যেকোন সময় এক্সেস করা যায়। যার ফলে এই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম গুলোই বর্তমানে টিভি ভিউয়েরশিপের অনেকটা জায়গায় দখল করে নিয়েছে। ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মাঝে এইসব প্ল্যাটফর্মের প্রতি আকর্ষন বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে ব্যবহৃত জনপ্রিয় বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোর মাঝে রয়েছে – নেটফ্লিক্স, হইচই, জি ফাইভ ইত্যদি। সেই সাথে দেশীয় প্লাটফর্ম বিঙ্গি, বায়স্কোপ, বাংলাফ্লিক্স, টফি ইতাদি দিনদিন অনেক দর্শককে আকর্ষণ করছে। এই প্লাটফর্মগুলোতে মাসিক বা বার্ষিক সাবস্ক্রিবশন ফি’র মাধ্যমে যখন ইচ্ছা তখন নিজের অবসর সময়ে ও সুযোগ বুঝে পছন্দের শো দেখে নেওয়া যায়।
পাশাপাশি স্মার্টফোন ইউজার ইন্টারফেস থাকার ফলে ঘরে ফিরে টেলিভিশান এর সামনে বসার প্রয়োজন হয় না, চলতে, ফিরতে হাতের মুঠোয় থাকে বিনোদন দনিু য়া। ফলে এগুলোর স্ক্রিনিং-টাইম ট্রেডিশনাল মিডিয়ার থেকে অনেক বেশি। শুধুমাত্র তাই না এসকল প্ল্যাটফর্মে কমার্শিয়াল এডভারটাইজমেন্টের এঙ্গেজমেন্ট ক্যাবল টিভির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। কারণ এখানে বয়স-লিঙ্গ-এক্টিভিটি-আচরণ ভেদে কাস্টমাইজ অডিয়েন্স সিলেক্ট করা যায়। তাই বর্তমানে এই OTT প্ল্যাটফর্ম গুলোই টিভি চ্যানেল গুলোর তুলনায় বেশি ভিউয়ার পাচ্ছে।
এর কারণটাও বেশ স্পষ্ট। ডিজিটাল মিডিয়ার সিংহভাগ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে। ফেসবকু , ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক এসকল প্লাটফর্মে রয়েছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সাথে সরাসরি ইন্টারেক্ট করার সুযোগ। যার ফলে যেকোন মেসেজ ডেলিভারি করার বেলায় সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের কথার বেশ প্রভাব এখানে দেখা যায়। তরুণ দর্শক সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে বেশি স্ক্রিনিং-টাইম দেয় বিধায় এসকল প্লাটফর্মের মাধ্যমে তাদের টার্গেট করা বেশ সহজ।
সম্প্রতি Business Post এর তথ্য মতে বাংলাদেশে ৭৪ শতাংশ ভিউয়ারস তাদের হাতে থাকা মুঠোফোনটির মাধ্যমে এসব প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিমিং করে। OTT প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তাদের ভাষ্যমতে তাদের ভিউয়ারদের ৫০% ই ১৮ থেকে ২৪ বছরের এবং ২২% ই ২৫ থেকে ৩৪ বছরের হয়ে থাকে। Statista , এর ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী গ্লোবাল OTT প্ল্যাটফর্মের মার্কেট সাইজ এখন পর্যন্ত ১৭৮ কোটি ডলার যা ২০২৭ সালে ২৭৫ কোটি ডলার ছাড়াবে। এই জনপ্রিয়তার কারন হল ইন্টারনেটের সহজ এক্সেস। ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্তও বাংলাদেশে ১১২.৭১৫ লক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারি আছে যাদের ৯.৫ লক্ষ ই ব্রডব্যান্ড সেবা ব্যবহার করে যার ফলে এসব স্ট্রিমিং সাইটগুলোতে ভিউয়ারশিপের পরিমান ও দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশি প্ল্যাটফর্ম BongoBD বর্তমানে ৪.৩ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে । এছাড়াও ফ্রি এক্সসেস পাওয়া যায় এমন স্ট্রিমিং সাইটেতো এ সংখ্যাটি অগুনিত। তাছারা ভারতীয় বাংলা কন্টেন্ট প্ল্যাটফর্ম hoichoi তেও বাংলাদেশি সাবস্ক্রাইবার, কন্টেন্ট ও নির্মাতাদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে।
এবার জেনে নেওয়া যাক কেন ট্রেডিশনাল মিডিয়ার ভিউয়ারশিপ কমছে এবং ডিজিটাল মিডিয়ার ভিউয়ারশিপ বাড়ছে?
ভিউয়ারশিপ বাড়া কিংবা কমার বিষয়টি শুধুবাংলাদেশেই না সারা বিশ্বেও একিরকম। ভারতীয় এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, দেশটিতে প্রায় ৬৫% জনগন যাদের ৩৫ বছর বয়স বা তার কম, তারা টিভি কম দেখে এবং অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের দিকে বেশি আগ্রহ। এর কারন হিসেবে দেখনো হয়েছে এই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম গুলোর সহজলভ্যতা এবং সুবিধা জনক সময়ে নিজের পছন্দের শো, সিরিজ, ডকুমেন্টারিস দেখার সুযোগ। তাছাড়া এই অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম গুলো শুধুদেশিও না বিদেশি বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকি ২০২০ সালের বিশ্বব্যাপী করণা মহামারির সময়ও লক্ষ্য করা যায় গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতেও ট্রেডিশনাল মিডিয়ার হার কমে গিয়ে ডিজিটাল মিডিয়ার হার বাড়া শুরু হয়।
Neilson কোপানি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত গ্লোবালি ক্যাবল কংসাম্পশন কমেছে ২২.৬% যা ২০২১ সালেও ৩৪.৪% ছিল। গ্লোবাল ওয়েব ইনডেক্স এর গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৪ সালে টিভি দেখার জন্য একজন ৫৫-৬৪ বয়সের মানষু গড়ে সময় দিত ৩ ঘণ্টা ৩ মিনিট এবং পাশাপাশি একজন ১৬-২৪ বয়সী গড়ে সময় দিত ১.৪১ মিনিট যা ২০১৮ তে এসে হয়েছে যথাক্রমে ২ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট এবং ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
এইবার যদি আমরা অনলাইন স্ট্রিমিং এর দিকে তাকাই একইভাবে আমরা দেখব, ২০১৪ সালে অনলাইন স্ট্রিমিং এ একজন ৫৫-৬৪ বয়সের মানুষ গড়ে সময় দিতো মাত্র ১৯ মিনিট যা ২০১৮ তে এসে দাঁড়ায় ৩৯ মিনিট এবং একজন ১৬-২৪ বছর বয়সী মানুষ গড়ে সময় দিত ১ ঘণ্টা যা ২০১৮ তে এসে হয়েছে ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিট । আমেরিকাতে দৈনিক মিডিয়া কংসাম্পশনের ৫৭ শতাংশ জড়েু থাকে ডিজিটাল মিডিয়া। ভারতে এই হা্র ৭১% এবং থাইল্যান্ডে ৭২ শতাংশ।
এই বিশাল গ্যাপ তৈরি হওয়ার কারন হিসেবে দেখানো হয়-
ইন্টারনেটের সহজ এক্সসেস – ২০০৫ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল যা ২০২২ এ এসে দাঁড়ায় ৬৩% । ইন্টারনেটের এই বিপুল অ্যাক্সেস এর ফলে পৃথিবীর যেকোনো কোণায় বসে যেকোনো জায়গার নাটক, সিনেমা, সিরিজ দেখা এখন হয়ে গেছে খুব ই সাধারন ব্যাপার। এক দেশের কালচার অন্যদেশে যেতে এখন আর কোনো বাধাও নেই। যেকোনো কমার্শিয়াল টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়ে যাওয়াতে এই সেক্টরটি দিনদিন ভালো করছে।
সময় উপযোগী কন্টেন্ট – সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা নিজেদের কন্টেন্টের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে তারা কথা বলে। যার ফলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ট্রেন্ডিং বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার একটি প্লাটফর্ম পায়। সেই সাথে তারা সুযোগ পায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনার। তাই ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে অ্যাডভাটাইজাররাও বিভিন্ন কন্টেন্ট বানিয়ে থাকেন।
ইন্টারএকটিভ– ক্যাবল টিভি’র অন্যতম দর্বুর্বলতা হল এটি একমুখী কমিউনিকেশন করে থাকে। বর্তমান গতিশীল দুনিয়াতে আ্মাদের সবার’ই যেন কিছু বলার থাকে। কোনো কন্টেন্ট ভালো না লাগলে আমরা সাথে সাথে কমপ্লেইন লিখে পাঠাই, অযৌক্তিক কোন কমার্শিয়াল দেখলে সোশ্যাল মিডিয়া গরম করে ফেলি পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে। যেমন ২০২০ সাথে ভারতে ইউনিলিভার কোম্পানিটি তাদের ‘ফেয়ার এন্ড লাভলী’ প্রোডাক্টটির জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচুর কটাক্ষের স্বীকার হয় এবং তারকারা তাদের এই প্রোডাক্টটি প্রোমশন করা বন্ধ করে দেয়। যার ফলে তারা তাদের নাম বদলিয়ে ‘গ্লো এন্ড লাভলী’ রাখতে বাধ্য হয়। উভয়মখিু ইন্টাররেকশনের যুগে একমুখী কমিউনিকেশন পিছিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক ।
কম ব্যয়বহুল– যদি শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করি, ক্যাবল কানেকশনের জন্য প্রতিমাসে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা দিতে হয় যেখানে ডিজিটাল মিডিয়ার বাংলাদেশি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম গুলোতে বার্ষিক ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে সাবস্ক্রিবশন কিনতে হয়। বিদেশি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম গুলো বার্ষিক ৩০০০ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে সাবস্ক্রিবশন অ্যাক্সেস দেয় যা কেবলের তুলনায় কম ব্যয়বহুল।
সময়ের ফ্লেক্সিবিলিটি – নির্দিষ্ট কোন বাধাধরা সময় নেই বিধায় দর্শক এখানে নিজের সুবিধামতো সময়ে তার পছন্দের কন্টেন্ট দেখতে পারে। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার শেষে কিংবা কাজের ফাঁকে যাত্রাপথে যেকোন অবস্থাতেই এখন মিডিয়া কংসাম্পশন সম্ভব। যার ফলে অ্যাডভাটাইজাররাও টেলিভিশনের সময়ের হিসাবে কমার্শিয়াল না বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্টের উপর বিডিং ভিত্তিতে কমার্শিয়াল বানিয়ে থাকেন।
এছাড়াও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী কে টার্গেট করে মার্কেটিং পলিসি সাজানো যায় বলে এটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। একটি ডিজিটাল মিডিয়া ফার্ম তাদের করা এক জরিপে দেখিয়েছে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী কে টার্গেট করে একাজ করার ফলে তাদের কোম্পানির অরগানিক ট্রাফিক মাত্র ১২ মাসে ৭৪৪% বেড়েছে।
ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া সময়োপযোগী নাকি ডিজিটাল মিডিয়া সেই তর্কে না গিয়ে যদি আমরা ভিউয়ারশিপ নিয়ে কথা বলি তাহলে দেখতে পাচ্ছি সময়ের সাথে সাথে গতানগুতিক ধারা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের সময়, রুচির ও এক্সেসের কথা চিন্তা করে ডিজিটাল মিডিয়ার অনলাইন স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম গুলো এখন বেশ এগিয়ে। আর তাছাড়া ডিজিটাল টিভি চ্যানেলগুলোও এখন আর শুধুমাত্র টিভিতেই আটকে নেই , সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তারাও তাদের অডিয়েন্স খুজেঁ নিচ্ছে।