Dark

Auto

Light

Dark

Auto

Light

ট্যুরিজম খাতে বিশ্ব ও বাংলাদেশ

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আবারো বিশ্বজুড়ে বেড়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আনাগোনা। আর এরই সাথে পুনরায় চাঙ্গা হচ্ছে বিশ্বের ট্যুরিজম মার্কেট। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানান আকর্ষণীয় স্থানে ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত কারণে প্রতিবছর প্রায় ৪৪ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ ভ্রমণ করেন। এরই ফলে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫৬ লক্ষ ৬৮ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার ট্যুরিজম মার্কেট। আজকের ভিডিওতে আমরা এই ট্যুরিজম মার্কেট এবং এর সাথে গড়ে উঠা আনুষঙ্গিক সকল বিষয় সম্পর্কে জানবো। 

প্রথমে জেনে নেয়া যাক ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করতে একটি দর্শনীয় স্থানের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে একটি স্থান কতোটা আকর্ষণীয় হবে-  

নান্দনিকতা – শুরুতেই বিবেচনায় রাখতে হয় স্থানটি কতোটা দৃষ্টিনন্দন এবং ভ্রমণের জন্য আনন্দদায়ক। এটা হতে পারে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট আকর্ষণীয় কোন স্থান; যেমন, সমুদ্র সৈকত, দ্বীপ, পাহাড়, গিরিখাত ইত্যাদি কিংবা মানবসৃষ্ট কোন দৃষ্টিনন্দন পার্ক, লেক, থিয়েটার ইত্যাদি। 

আবাসন ব্যবস্থা – দূর থেকে ভ্রমণ করে আসা যাত্রীরা চান দর্শনীয় স্থানের আশেপাশে ভালো কোন জায়গায় অবস্থান করতে। হতে পারে কোন হোটেল, অস্থায়ী ক্যাম্প অথবা দীর্ঘ সময় থাকার জন্য কোন আবাসিক  অ্যাপার্টমেন্ট। দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি সুন্দর আবাসন ব্যবস্থা থাকাটাও বেশ জরুরি। 

যাতায়াত ব্যবস্থা – আলোচনার ৫টি বিষয়ের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বিশেষ একক অথবা গণপরিবহন ব্যবস্থা থাকা বেশ জরুরি। এছাড়া দেশের ভিতরের দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা গণপরিবহনে যাতায়াত সুবিধা থাকার পাশাপাশি নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত এবং পার্কিংয়েরও সুব্যবস্থা থাকাও জরুরি। সেই সাথে গণপরিবহনের ভাড়া যাতে জনগণের চাহিদার নাগালে থাকে, সেই দিকে নজর রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

খাবার – দর্শনীয় স্থানের অন্যতম একটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু থাকে সেখানকার খাবার। সাধারণত দর্শনার্থীরা স্থানীয় খাবারই চেখে দেখতে বেশি পছন্দ করে, কারণ এটি তাদের সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতির ব্যাপারে একটি পরিষ্কার ধারনা দিতে সাহায্য করে। যেমন আপনি যদি কক্সবাজার ভ্রমণে যান, আপনি অবশ্যই চাইবেন সামুদ্রিক মাছ চেখে দেখতে। এজন্য স্থানীয় খাবার পরিবেশন করে এমন রেস্তোরাঁ গড়ে উঠাও বেশ জরুরি। 

ভ্রমণ সেবা – ভ্রমণ সেবাকে একটি ট্যুরিজম মার্কেটের কালোঘোড়া বললেও কম হবে। যেকোনো দর্শনীয় স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ছোট-বড় নানান ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা সেবা। নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা আপনার ভ্রমণের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিবে। এর মাঝে রয়েছে হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা, খাবার ব্যবস্থা, আবাসন সুবিধাসহ সবকিছুই। 

এই পাঁচটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে নানান ভ্রমণ সেবা এবং সেই সাথে নানান প্রকল্প। এর মধ্যে আবাসন এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান, যেখানে আপনি তাদের সাহায্যে হোটেল বুকিং, বিমান টিকেট বুকিং থেকে শুরু করে ভ্রমণের যাবতীয় পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন ঘরে বসেই অনলাইনে। আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক মার্কেট রিসার্চ এজেন্সি রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের বাজার গবেষণা অনুসারে, বর্তমান অনলাইন ভিত্তিক এমন ভ্রমণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার ৪৫০কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি যা ২০২৬ সালের নাগাদ ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। এমনই কিছু বহুল পরিচিত কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে আমরা আজকে জানবো। 

ট্যুরিজম ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপট্র্যাভেল (TUI GROUP TRAVEL)  

টুই গ্রুপট্র্যাভেল একটি জার্মান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যারা বিশ্বজুড়ে ১৮০টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এই কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের সহযোগী হিসেবে আছে ১,৬০০টি ট্রাভেল এজেন্সি, ৬টি এয়ারলাইন কোম্পানি যাদের রয়েছে ১৫০টিরও বেশি বিমান, ৩০০টি হোটেল এবং ১৭টি বিলাসবহুল জাহাজ। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে তাদের বার্ষিক আয় ১৫৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু তাদের প্রতিবছরের বিনিয়োগ মাত্র ১ কোটি মার্কিন ডলার, যা তাদের মোট আয়ের ১ শতাংশেরও কম। আর তাদের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে থাকে। 

কার্নিভাল কর্পোরেশন (CARNIVAL CORPORATION) 

আপনি যদি ঠিক করেন একটি বিলাসবহুল জাহাজে করে সমুদ্রের মাঝে পরিবার নিয়ে সময় কাটাবেন, তাহলে কার্নিভাল কর্পোরেশন হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলাসবহুল জাহাজ ভ্রমণ কোম্পানিটি ১০টি জাহাজ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকায় তাদের রয়েছে ১০০টিরও বেশি বিলাসবহুল জাহাজ। যাত্রীদের জন্য ৭টি মহাদেশ জুড়ে তাদের রয়েছে ৭০০টি ভ্রমণ ঠিকানা। যদিও প্রতিষ্ঠানটি কতোটা পরিবেশ বান্ধব তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কিন্তু ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুসারে তাদের বার্ষিক আয় ১৯০ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার। সেই সাথে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী সংখ্যা ১ লক্ষ ৫০ হাজার। 

ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল (MARRIOT INTERNATIONAL) 

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই হোটেল বুকিং কোম্পানিটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ হোটেল ও রিসোর্ট চেইন। ১ লক্ষ ২০ হাজার কর্মী নিয়ে তাদের রয়েছে ৮ হাজার ৪৮৪ টি হোটেল এবং রিসোর্টের মালিকানা, যা বিশ্বের ১৩১টি দেশে ছড়িয়ে আছে। এর মাঝে ২ হাজার ১৪৯ টি হোটেল ম্যারিয়ট নিজে পরিচালনা করে এবং বাকি গুলো বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পরিচালনা করা হয়। কোম্পানিটির বার্ষিক আয় ১০৯ কোটি ৯০ লক্ষ মার্কিন ডলার যা ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকাশিত। কোম্পানিটির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২ হাজার ৫৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। 

বুকিং.কম (BOOKING.COM) 

বুকিং ডট কম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বুকিং সার্ভিস যার মাধ্যমে আপনি সহজেই হোটেল বুকিং, ফ্লাইট বুকিং, রিসোর্ট বুকিং এমনকি ট্যাক্সি বুকিংও করতে পারবেন। নেদারল্যান্ড ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে আপনি হোটেল রুম বা রিসোর্টের লিস্টিং জমা দিতে পারবেন এবং কাঙ্ক্ষিত কাস্টমার তার পছন্দমতো স্থানে বুকিং করতে পারবেন। এখানে কাস্টমার হোটেল এবং ফ্লাইট বুকিং এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন নান্দনিক জায়গায় ট্যুর এবং নানার কার্যক্রমের জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা সাজাতে পারে। বুকিং ডট কমের ওয়েবসাইট বিশ্বজুড়ে ৪৩টি ভাষায় চালু রয়েছে এবং বর্তমানে এই ওয়েবসাইটে ২ কোটি ৮০ লক্ষ লিস্টিং আছে। ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৫৭০ কোটি মার্কিন ডলার। 

এয়ারবিএনবি (AIRBNB)

ছুটি কাটানো কিংবা দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে আবাসন নিশ্চিতের জন্য ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের এখন প্রথম পছন্দ এয়ারবিএনবি। হোটেল বুকিং এর পাশাপাশি ঘরোয়া পরিবেশে ব্যক্তিগত রুম বুকিং করার সুযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। সস্তা ঘর থেকে শুরু করে ট্রি হাউজ কিংবা বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট সবই পেয়ে যাবেন আপনি এয়ারবিএনবি তে। এখানে ঘরের মালিক বা হোস্ট তাদের জায়গার ছবি এবং বিস্তারিত দিয়ে ওয়েবসাইটে লিস্টিং করে এবং কাস্টমার তা দেখে তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বুকিং নিশ্চিত করে থাকে। সাধারণ হোটেল বুকিং থেকে এখানে আলাদা ব্যাপার হলো, কাস্টমার বা গেস্ট এখানে ব্যক্তিগতভাবে বসবাস করে। হোটেলের মতো বিশেষ সার্ভিস এখানে থাকে না। অনেকটা আমাদের ঘর ভাড়া নেয়ার মতো, তবে ঘরের সকল আসবাবপত্র এখানে আগে থেকেই থাকে। বর্তমানে এয়ারবিএনবির ওয়েবসাইটে ৬০ লক্ষেরও বেশি আবাসন লিস্টিং রয়েছে। ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। 

এগুলো তো গেলো বাংলাদেশের বাহিরের সকল পর্যটন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের কথা। আমাদের দেশেও কিন্তু পর্যটন স্থানের কমতি নেই।

গত এক দশক ধরে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে নিজেকে তুলে আনতে নানা খাতে কাজ করে যাচ্ছে। আরএমজি, বৈদেশিক রেমিট্যান্স ইত্যাদির মতো বেশ কয়েকটি খাতে  বাংলাদেশ এখন নান দেশের  কম্পিটিশন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং আরও অনেক কিছুর কারণে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের জন্য বেশ উপযোগী এবং লাভজনক একটি খাত। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতিবছর লক্ষাধিক দেশি এবং বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করে। এছাড়া আছে সিলেটের শ্রীমঙ্গল, খুলনার সুন্দরবন ও ষাট গম্বুজ মসজিদ, সীতাকুণ্ড হিলট্রেক্স, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা। 

নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ২০০০ সালের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ২০১৯সালে, মোট জিডিপির ৪.৪ শতাংশ অবদান ছিলো এই খাতটির। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রায় সতেরো লক্ষ কর্মী নিয়োগ করা হবে, যা দেশের কর্মশক্তির প্রায় ৪.২  শতাংশ। 

তবে মন খারাপের বিষয় হলো দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ ব্যয় ৩৩.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২০১৯ সালে ৬৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা থেকে ২০২০ সালে ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটিতে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের ব্যয় ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা থেকে কমে ২০২০ সালে মাত্র ১ হাজার ২২০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।

এসকল সমস্যার কারণ হলো ভ্রমণকালীন সময়ে যাতায়াত ও নিরাপদ আবাসন সুবিধা। রিয়েল-টাইম তথ্যের ঘাটতির কারণে ভিনদেশি ভ্রমণ উৎসাহীদের জন্য বাংলাদেশ একটি চ্যালেঞ্জিং গন্তব্য। ভ্রমণকারীরা প্রায়শই পরিবহন এবং বাসস্থানের অনেক সস্তা বিকল্প সম্পর্কে সচেতন থাকে না, যা ফলে খসাতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। সময় মতো আগে থেকেই বুকিং না থাকলে পাওয়া যায় না পছন্দের রুমটিও। বিভিন্ন হোটেলের মধ্যে থাকার সুযোগ সুবিধা, খাবার কিংবা চার্জিং ফি ইত্যাদি তুলনামূলক পার্থক্য জানার সুযোগ থাকে না । অনলাইন ঘেঁটেও পায়া যায় না প্রয়োজনীয় তথ্য। অনেক ক্ষেত্রে, ফোন কলই হয়ে থেকে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম, যার ফলে বেশিরভাগ সময় ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হয়। মোটাদাগে সম্পূর্ণ ট্যুর পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং ভ্রমণকারীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, যা বাংলাদেশে ভ্রমণের পেছনে  কিছু নিরুৎসাহের কারণ। তাছাড়া ছুটির সময়গুলোতে এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। এই ভোগান্তি কমাতে বাংলাদেশেও ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং হোটেল বা বিমান টিকেট বুকিং নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসকল প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও, বেশ কিছু সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের নাম উল্লেখ করা যায়। 

বর্তমান সময়ে গো-জায়ান বাংলাদেশে বেশ সাফল্য লাভ করছে। ২০১৭ সালে চালু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হোটেল ও  রেস্তোরাঁ বুকিং থাকলেও বর্তমান সময়ে তারা বিমান টিকেট বুকিং এবং ট্রিপ পরিকল্পনার কাজ করছে। ১১৮ জন কর্মী নিয়ে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৩ এবং ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ২৭ কোটি ৭১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ থেকে উত্তোলন করেছে। 

কোম্পানিটি হোটেল, বাস, ফ্লাইট বুকিং সম্পূর্ণভাবে অনলাইন করে ভ্রমণের সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু বিরাট সমস্যার সমাধান করেছে। অফলাইনে ভ্রমণ বুকিং করার সময় গ্রাহকরা যে সমস্যার সম্মুখীন হন তা সমাধানে গো-জায়ান বুকিং প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ অনলাইনে নিয়ে এসেছে। কোম্পানিটির আরেকটি চমকপ্রদ ব্যাপার হলো গো জায়ানের সাথে পর্যটকরা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের ট্যুরের পরিকল্পনা করতে পারে। পাশাপাশি নিজেদের পছন্দ মত কাস্টমাইজ করার সুযোগ তো আছেই। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট পদ্ধতি ও  ট্রাভেল লোন প্রদানের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রয়োজন অনুসারে তাদের ট্রাভেল প্ল্যান সাজিয়ে থাকে যা বর্তমানে বেশ প্রশংসার দাবিদার। 

এছাড়াও আছে গ্রিন বাংলাদেশ ট্যুরস, দ্যা বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড, দ্যা বেঙ্গল লজিস্টিকস লিমিটেড, অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শেয়ার ট্রিপ ইত্যাদি। এসকল প্রতিষ্ঠান দেশের ভিতরে ট্রিপ পরিকল্পনা করা সহ দেশের বাহিরে ট্রিপ পরিকল্পনা, হোটেল ও বিমান টিকেট বুকিং, ভিসা প্রসেসিং এসকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। 

এসকল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশে বেশ কিছু ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিয়মিত বাজেট ট্যুর আয়োজন করছে এবং এদের মূল লক্ষ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিংবা যারা স্বল্প বাজেটে  ট্যুর দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তাদের সেবা প্রদান করা। এসকল প্রতিষ্ঠানের মোট আর্থিক হিসাব পাওয়া না গেলেও, দেশ ও দেশের বাহিরে বাজেট ট্যুর নিয়ে বেশ ভালো একটি বাজার গড়ে উঠেছে যা কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আরো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পর্যটন খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অফুরন্ত। সুপরিকল্পনা এবং যথাযথ ভোগান্তিবিহীন আরামদায়ক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে  ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে অবশ্যই ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ এবং অনলাইনে দ্রুত তথ্যের চাহিদা মেটাতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগ এই খাতকে আরোও সমৃদ্ধ করবে। 

Leave A Comment