সম্প্রতি শেষ হলো অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। আর সেই সাথে অনেকটা ঠান্ডা পরিবেশে নেমে এলো বাংলা একাডেমি এবং দেশের বই বাজারে। প্রতিবছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চাঙ্গা থাকে বই বাজার। বইমেলার মূল আয়োজক হিসেবে বাংলা একাডেমির যেমন নানান খাতে ব্যয় রয়েছে তেমনই তাদের আয়ও হয় বিভিন্ন খাত থেকেই। একসময় মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ গড়ে তুলতে শুরু হওয়া বইমেলা এখন নানান দিক থেকে বাণিজ্যক হিসাব নিকাশের মধ্যেও চলে আসছে। বাংলা একাডেমিসহ বাকি সকল বই প্রকাশকের জন্য বইমেলাকে কেন্দ্র করে করতে হয় নানান হিসাব নিকাশ। বইয়ের লেখক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমি সহ ছাপাখানার শ্রমিক সকলেই এই আর্থিক হিসাবের সাথে সংযুক্ত।
বাংলা একাডেমির আয়
মূলত স্টল এবং প্যাভিলিয়ন ভাড়া থেকে আয় করে থাকে বাংলা একাডেমি। আকারভেদে স্টলের রয়েছে বেশকিছু ক্যাটাগরি। মেলা প্রাঙ্গণে এক ইউনিটের অর্থাৎ ৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থের একটি স্টলের ভাড়া ভ্যাটসহ ১৫ হাজার ১৮০ টাকা। দুই ইউনিট অর্থাৎ দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের স্টলের ভাড়া ৩১ হাজার ৬২৫ টাকা। একইভাবে তিন ইউনিটের জন্য ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং চার ইউনিটের স্টলের ভাড়া ৮৩ হাজার ৪৯০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের গড় ভাড়া প্রায় ১৯ হাজার টাকা। আর এবারের বইমেলায় ছিল প্রায় আট শতাধিক স্টল। সেই হিসাবে কেবল স্টল ভাড়া থেকে বাংলা একাডেমির আয় হয়েছে ১ কোটি ৬১ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা।
স্টলের পাশাপাশি মেলায় দুই ধরনের প্যাভিলিয়ন সুবিধা দিয়ে থাকে বাংলা একাডেমি। ছোট প্যাভিলিয়নের আকার ২০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০ ফুট প্রস্থ, আর এর ভাড়া ভ্যটসহ ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৮০০ টাকা। বড় প্যাভিলিয়নের ভাড়া ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা, আর এটির আকার ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৪ ফুট প্রস্থ। এবারের মেলায় ১৩টি ছোট প্যাভিলিয়ন এবং ২১টি বড় প্যাভিলিয়ন ছিল। সেই হারে প্যাভিলিয়ন ভাড়া বাবদ বাংলা একাডেমির আয় হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।
অর্থাৎ স্টল এবং প্যাভিলিয়ন মিলিয়ে বাংলা একাডেমির মোট আয় প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এখানে বলে রাখা ভালো, মেলায় যে আট শতাধিক স্টলের মধ্যে খাবারের স্টলও রয়েছে। বাংলা একাডেমি থেকে ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া না হলেও, স্টল এবং প্যাভিলিয়ন ভাড়া বাবদ এই আয়ের একটি বড় অংশই যায় স্টল তৈরিতে এবং মেলার আনুষঙ্গিক সাজসজ্জাতে।
চাকরি বাজার
এবার আসা যাক বইমেলার সাথে সম্পর্কিত চাকরির বাজার নিয়ে। প্রেসমিলগুলোতে সারা বছরের প্রায় চারগুণ চাপ থাকে বইমেলার সময়। মেলা উপলক্ষে মেলায় থাকা প্রায় ৩০ শতাংশ বই নতুন প্রকাশিত হয়। সেই সাথে মেলায় প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ সেট করে বই ডেলিভারি করতে হয়। এজন্য প্রেসমিলের মালিক ও শ্রমিকদের দিনরাত কাজ করতে হয় বইমেলার মৌসুমে। এই সুবাদে অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয়ের সুযোগ পায় প্রেসমিলের শ্রমিকরা। যেহেতু প্রেসমিলগুলোতে বই ছাপানো এবং বাঁধাইয়ের চাপ থাকে, তাই এই সময়ে বইমেলা ২০২৩
বেশকিছু খন্ডকালীন চাকরীরও সৃষ্টি হয়।
একই সাথে বইমেলার স্টলগুলোতে ক্রেতা সামাল দেয়ার জন্য প্রকাশনীগুলো খন্ডকালীন সেলস পার্সন নিয়োগ দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই খন্ডকালীন কাজগুলোতে সুযোগ পেয়ে থাকে।
স্পন্সর
এবার কথা বলা যাক বইমেলার আয়োজনে যেসকল প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করে থাকে কিংবা নিজেদের পণ্যের প্রচারণার জন্য আলাদা স্টল দিয়ে থাকে তাদের ব্যাপারে। সাধারণত বই মেলার আয়োজনে বাংলা একাডেমি সরাসরি কোনো স্পন্সর গ্রহণ করে না। বরং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া থাকে স্পন্সরশীপ গ্রহণ করার এবং তারাই পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করে। এবারের বইমেলায় এরকম ২টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। একটি হলো আমাদের সবার পরিচিত বিকাশ এবং অপরটি হলো আবুল খায়ের গ্রুপের কফি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আমা।
বরাবরের মতোই বিকাশ এবার অনলাইন পেমেন্টে ১০% ক্যাশব্যাকের সুবিধা দিচ্ছে। এর ফলে ক্রেতা সাধারণ যেমন পাচ্ছেন বাড়তি ছাড়, তেমনি গ্রাহক সংখ্যা, প্রচারণা এবং অনলাইন ট্রানজেকশন সবই বাড়ছে বিকাশের। এর বাহিরে এসেও বিকাশের আছে বই অনুদান কেন্দ্র। আপনি যদি অসহায় এবং সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বই উপহার দিতে চান, তাহলে বইমেলায় থাকা বিকাশের বই কালেকশন পয়েন্টে গিয়ে আপনার বইটি দিয়ে আসলেই হবে। এর মাধ্যমে বিকাশ সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্বের জায়গাটিও জানান দিচ্ছে।
অপরদিকে কফি ব্র্যান্ড আমা বেশ বড় একটি প্যাভিলিয়ন দিয়েছে বইমেলার মাঝামাঝি স্থানে। মেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের পাশেই দিয়েছে তাদের কফি শপের প্যাভিলিয়ন। বইমেলার ক্রেতা, লেখক, প্রকাশক এবং সর্বসাধারণ সকলেই আসছে এই প্যাভিলিয়নে কফি এবং আড্ডার মাধ্যমে একটি সুন্দর সময় কাটাতে। ২০ টাকায় হট কফি এবং হট চকলেটের জন্য ‘আমা’ এর প্যাভিলিয়নে সবসময়ই দেখা দিয়েছে উপচে পড়া ভীর। প্রাইম লোকেশনে প্যাভিলিয়ন নেয়ার কারণে সবসময়ই তারা থেকেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
তো এই ছিলো এবারের বইমেলায় ব্যবসা এবং মার্কেটিং এর আলাপ সংক্রান্ত যাবতীয় সকল তথ্য। বইমেলার কোন আয়োজনটি আপনার ভালো লেগেছে এবং মেলায় নতুন আরও কোন কোন সেবা সংযোজন করা যায়, জানান কমেন্ট বক্সে।