বর্তমানে বহুল পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো সিআরএম, গেরিলা মার্কেটিং, ওয়ান টু ওয়ান ইত্যাদি মার্কেটিং পলিসির পাশাপাশি স্পোর্টস মার্কেটিংকে বেছে নিচ্ছে নানা ক্ষেত্রে। কম সময়ে অধিক সংখ্যক ভোক্তার নিকট পৌঁছানোর সহজ উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই স্পোর্টস মার্কেটিং।
শুধু ব্যাটে-বলে, জার্সিতে ব্র্যান্ডের লোগো কিংবা মাঠভর্তি ব্যানার সাজিয়ে নয়, বরং কৌশলে খেলার প্রতি দর্শকদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ব্র্যান্ডগুলো হাসিল করে নিচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা।
দর্শকদের ভোক্তাতে রূপান্তরের এই অভিনব কৌশল ব্র্যান্ডগুলোকে দিচ্ছে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ। তাহলে চলুন জেনে নেই কেন স্পোর্টস মার্কেটিং ব্র্যান্ডগুলোর কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে?
স্পোর্টস মার্কেটিং কী?
স্পোর্টস মার্কেটিং হলো একধরনের মার্কেটিং পলিসি যেখানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা ও খেলোয়াড়দের মাধ্যমে ব্র্যান্ড তাদের পণ্য এবং সেবার প্রচারণা করে থাকে।
টার্গেট মার্কেটিংয়ের মতোই নির্দিষ্ট খেলা এবং এর দর্শকগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে প্রচারণা করা যায় বলে ইদানীং স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তা বেশ বেড়েছে। বিলবোর্ড, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, মিডিয়া ক্যাম্পেইন, সামাজিক মাধ্যম অথবা প্রিন্ট মিডিয়া বিজ্ঞাপন, স্পন্সরশিপ, লোগো প্রদর্শন, খেলোয়াড়ের সাথে শর্তানুযায়ী চুক্তি- নানাভাবেই স্পোর্টস মার্কেটিং করার সুযোগ পায় ব্র্যান্ডগুলো। এতে ব্র্যান্ডের প্রচারের পাশাপাশি দর্শকমহলে ইতিবাচক ভাবমূর্তিও তৈরি হয়ে থাকে।
কেন ব্র্যান্ডগুলো স্পোর্টস মার্কেটিং বেছে নিচ্ছে?
ব্র্যান্ডগুলোর স্পোর্টস মার্কেটিং বেছে নেওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যায়; যেমন-
- স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো সহজেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় যা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং দ্বারা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
- স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহকের নিকট পৌঁছানো যায়।
- ইতিবাচক ব্র্যান্ড ইমেজ সৃষ্টি হয়।
- ভোক্তা-উৎপাদক সরাসরি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
- স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বড় পরিসরে গ্রাহক আকর্ষণ করা যায়, যার ফলশ্রুতিতে ট্রাসভার্সাল টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হয়।
- ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং পলিসিগুলোর তুলনায় স্পোর্টস মার্কেটিংয়ে খুব সহজেই রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট পাওয়া যায়। ফলে দিন দিন ব্র্যান্ডগুলো স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
(ভিডিওতে পড়ার সময় পয়েন্টগুলো স্ক্রিনে আসবে বুলেট পয়েন্ট হয়ে, এবং রিলেটেড ছবি কোলাজের মতো স্ক্রিনে থাকবে)
বহুল পরিচিত কিছু ব্র্যান্ড, যেমন- হুন্দাই, সনি, কোকা-কোলা, পেপসি, এলজি, নাইকি, এডিডাস, রিবক, এমিরেটস, রেড বুল এবং স্টার স্পোর্টস তাদের অন্যতম বিপণন হাতিয়ার হিসেবে স্পোর্টস মার্কেটিংকে ব্যবহার করছে।
স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের অন্যতম সফল উদাহরণ হলো রেড বুল। রেড বুল, অস্ট্রিয়ান রেড বুল জিএমবিএইচ কোম্পানির মালিকানাধীন বিশ্বের সর্বাধিক স্বীকৃত ব্র্যান্ডগুলোর একটি। আগ্রাসী মার্কেটিং কৌশল এবং সহজ শর্তে স্পন্সর করার কারণে বেশ দ্রুতই সফলতার মুখ দেখেছে ব্র্যান্ডটি। গুটিকয়েক খেলাই নয়, বরং বেশ দীর্ঘ রেড বুলের স্পন্সর লিস্ট।
স্পোর্টস মার্কেটিংয়ে আরেক পরিচিত মুখ স্টার স্পোর্টস। প্রায় সকল প্রতিযোগিতামূলক খেলা, যেমন- ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেনিস ইত্যাদির টেলিভিশন স্বত্ব কিনে নিয়ে থাকে ব্র্যান্ডটি। স্টার স্পোর্টসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন ছিলো “মউকে পে চউকা” (Mauke Pe Chauka)। শুধুমাত্র দর্শকদের খেলাধুলার প্রতি আবেগ কাজে লাগিয়ে হাস্যরসাত্মক অথচ প্রতিযোগিতামূলক এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সমগ্র ভারত এবং ভারতের বাইরে অগণিত দর্শকের কাছে ব্র্যান্ডটি পৌঁছাতে পেরেছিল।
মূলধারার খেলা, ক্লাব কিংবা প্রতিযোগিতার বাইরেও নামকরা খেলোয়াড়দের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে যায় ব্র্যান্ডগুলো। গেল কাতার বিশ্বকাপে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড লুই ভুটনের ‘ভিক্টরি ইজ অ্যাঁ স্টেট অব মাইন্ড’ ক্যাম্পেইনে ফুটবলের অন্যতম দুই তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসিকে দেখা যায় একই ফ্রেমে। বিলাসবহুল ব্র্যান্ডটি বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য ট্র্যাভেল কেস ডিজাইন করে থাকে, এবং ক্যাম্পেইনটি ছিল তাদের মার্কেটিংয়েরই অংশ।
এছাড়াও, বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান মুখপাত্র হিসেবে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, জা এন্ড জি, গ্রামীণফোন, অপ্পোর মতো ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন। এসবের মূল কারণ হলো- ব্র্যান্ডগুলো চায় খেলোয়াড়দের ভক্তদের মনে দ্রুত জায়গা করে নিতে, এবং সেই খেলোয়াড়ের অনুসারীরাও যাতে তাদের ব্র্যান্ডকে অনুসরণ করে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, স্পোর্টস মার্কেটিং কেবল ব্র্যান্ডগুলোর জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা, ক্লাব এবং খেলোয়াড়দের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তাদের লাভ কিংবা আয়ের বড় অংশই আসে এ ধরনের মার্কেটিং থেকে।