আর্জেন্টিনার জয় দিয়ে পর্দা নামলো কাতার ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ আসরের। এর মাঝেই ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। চার বছর অন্তর অন্তর পুরো বিশ্ব মাতানো এই ফুটবল প্রতিযোগিতা উপভোগ করে প্রায় চারশো কোটি মানুষ। পাশাপাশি চলে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হবার প্রতিযোগিতাও। ২০২২ সালের আয়োজক দেশের খেতাব ছিনিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কাতার। ২০২৬ সালে এই সুযোগ পাচ্ছে তিনটি দেশ। প্রথমবারের মত একসাথে তিনটি দেশ- কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হবে ফিফা বিশ্বকাপের ২৩তম আসর।
শুধুমাত্র বিশ্বের সামনে নিজেদের তুলে ধরাই কি আয়োজক দেশ গুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য? একদমই না বরং এত জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পেছনে জড়িয়ে থাকে জাতীয় ও অর্থনৈতিক দিকও। চলুন জেনে নেই ম্যাপল পাতার দেশ কানাডা কেমন করে লাভের হিসাব কষবে বিশ্বকাপের এই আসর থেকে-
ফুটবলে অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়া দেশ কানাডা। ১৯৮৬ সালের পর এইবারই কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ গ্রুপ পর্ব খেলেছে দেশটি। ফুটবলের দিক থেকে দর্শকদের হতাশ করলেও জাতীয় ভাবমূর্তি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ২০২৬ বিশ্বকাপ কানাডার জন্য বেশ লাভজনক হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
আকর্ষণীয় পর্যটন ও আবাসন স্থান হিসেবে খ্যাত কানাডার মন্ট্রিয়ল এবং টরোন্টো শহরে গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের সম্ভাব্য দশটি ম্যাচ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আসন্ন বিশ্বকাপে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের দিক থেকে দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। ফিফা আয়োজকদের মতে, বিশ্বকাপ বিপুল পরিমাণে টিভি দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে যা থেকে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং চল্লিশ হাজারের ও বেশি স্বল্পমেয়াদী কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ হলো তার সব থেকে বড় প্রমাণ। ২০২২ এর বিশ্বকাপ থেকে দেশটির আনুমানিক মোট আয় ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার। তাহলে বুঝতেই পারছেন ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করা আয়োজক দেশগুলোর জন্য বেশ লাভজনক। টরোন্টো সিটি কাউন্সিলের ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী টরোন্টোতে অনুষ্ঠিতব্য পাঁচটি ম্যাচ থেকে আনুমানিক ৩০ কোটি ৭০ লক্ষ ডলারের প্রভাব পড়বে কানাডার জিডিপিতে। এর ফলে ৩,৩০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি এক লক্ষ চুয়াত্তর হাজার (১,৭৪,০০০) দর্শক ম্যাচ চলাকালীন সময়ে টরোন্টো শহরে রাতে অবস্থান করবেন এবং এই খাতে মিউনিসিপাল অ্যাকোমোডেশন ট্যাক্স (MAT) হিসেব করলে, সেই আয় দাঁড়াবে ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলারে।
শুধু অর্থনীতিই নয়, অবকাঠামোগত দিক থেকেও বেশ ভালোভাবেই নিজেদের তৈরি করছে কানাডা। সচরাচর গ্রুপ পর্বে চল্লিশ হাজার, কোয়ার্টার ও সেমি ফাইনালে ষাট হাজার এবং প্রতিযোগিতার শুরু ও ফাইনালে সর্বনিম্ন আশি হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম প্রয়োজন হয় ফিফার। কানাডার মন্ট্রিয়ল এবং এডমন্টন শহরে সর্বোচ্চ ছাপ্পান্ন হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম থাকলেও, টরোন্টোতে নেই ফিফার উপযুক্ত স্টেডিয়াম। তাই টরোন্টোর বিএমও ফিল্ডের ধারণক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে দেশটি।
এছাড়া কানাডায় প্রচুর পরিমাণে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে আসন্ন বিশ্বকাপে। স্টেডিয়াম নির্মাণ, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ, বিনোদন এবং পর্যটন খাত সম্প্রসারণসহ নানাখাতে বিনিয়োগের নতুন মাধ্যম তৈরি হওয়ার কারণে বিশ্বদরবারে নিজেদের ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে পারবে দেশটি। পাশাপাশি দেশটি কোভিড পরবর্তী সংকট কাটিয়ে উঠার সুযোগ পাবে।
বিশ্বকাপের মত আন্তর্জাতিক আয়োজনগুলো দেশীয় সংস্কৃতি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাছাড়া আগামী বিশ্বকাপ হবে আরো বড় পরিসরে অর্থাৎ ৩২টি দলের জায়গায় গ্রুপ পর্বে খেলবে ৪৮ টি দল। কী ভাবছেন – এই সুযোগ হাতছাড়া করবে কানাডা? একদমই না। বরং কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর মতই নিজেদের সংস্কৃতি এবং দেশের জাতীয় ভাবমূর্তিকে তুলে ধরবে কানাডাও।